News
Loading...

কফির রহস্যময় আবিষ্কার: কীভাবে মেষপালক কালদির হাত ধরে শুরু হয় কফির যাত্রা?

 কফির রহস্যময় আবিষ্কার: কীভাবে মেষপালক কালদির হাত ধরে শুরু হয় কফির যাত্রা?

ই গল্পের শুরু নবম শতাব্দীতে, ইথিওপিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এক নিরীহ মেষপালক, যার নাম কালদি (বা খালিদি), প্রতিদিন মেষ চরাতে জঙ্গলে যেতেন। সাধারণত দিনের শেষে তার মেষগুলো ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে ফিরত। কিন্তু একদিন তিনি লক্ষ করলেন, সেই দিনটির শেষে মেষগুলো অস্বাভাবিক রকমের চনমনে ও শক্তিতে ভরপুর। তারা যেনো সারাদিনের ক্লান্তির কোনো চিহ্নই বহন করছে না।

কফির রহস্যময় আবিষ্কার: কীভাবে মেষপালক কালদির হাত ধরে শুরু হয় কফির যাত্রা?


কালদি ভেবে পেলেন না, এমনটা হঠাৎ কেনো ঘটলো। তিনি কারণ অনুসন্ধান করতে থাকেন এবং লক্ষ্য করলেন যে তার মেষগুলো একটি নির্দিষ্ট গাছের লাল বেরি বা ফল খেয়ে এতো উচ্ছ্বসিত হয়েছে। কালদির কৌতূহল আরও বাড়ল। নিজেও সেই ফলটি চেখে দেখলেন এবং অবাক হয়ে দেখলেন, তাঁর শরীরেও শক্তির এক নতুন প্রবাহ এসে গেল।

কালদি এই অভিজ্ঞতার কথা তার মেষপালনের মালিককে জানালেন। মালিক কিছুটা কৌতূহলী হলেও বিষয়টি নিয়ে বেশি মাথা ঘামালেন না। তবে কালদি এরপর সেই বিশেষ বেরি ফলটি নিয়ে হাজির হন এলাকার এক সুফি সাধকের কাছে, যিনি জ্ঞানের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। প্রথমে সুফি সাধক সেই ফলটিকে শয়তানের প্ররোচনা মনে করে দূরে সরিয়ে দেন। তবে এর আকর্ষণীয় গন্ধের কারণে তিনি শেষমেশ চেখে দেখতে রাজি হন। তিনি ফলটি খেয়ে তার বিশেষ গুণাবলী অনুভব করেন এবং বেরির গুণাবলী সম্পর্কে একটি ইতিবাচক মতামত দেন। এরপর তার শিষ্যরা সিদ্ধান্ত নেন বেরিগুলো সিদ্ধ করে এর নির্যাস পান করার। এভাবেই পানীয় কফির পথচলা শুরু হয়।

কফির আবিষ্কার নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের মতামত ও গল্প। কেউ কেউ মনে করেন, কফি আবিষ্কারের এই গল্পটি কিংবদন্তি, তবে এই গল্পের সূত্রেই আমরা প্রথম জানতে পারি কফির উদ্ভব সম্পর্কে। অন্য একটি মতানুসারে, ইথিওপিয়া থেকে কফির চারা ইয়েমেনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে এর প্রচলন শুরু হয়। সেখান থেকে তুরস্ক ও মিসরে কফির জনপ্রিয়তা বেড়ে ওঠে। ষোড়শ শতাব্দীতে মধ্যপ্রাচ্যেই প্রথম কফি ঘর বা কফি হাউজ স্থাপিত হয়, যেখানে মানুষজন বসে বসে কফি পান করত এবং আড্ডা দিত।

কফির রহস্যময় আবিষ্কার: কীভাবে মেষপালক কালদির হাত ধরে শুরু হয় কফির যাত্রা?


কফির এই জাদুকরী প্রভাবের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে এক সময় এটিকে প্রার্থনা ও ধ্যানের সহায়ক হিসেবে গণ্য করা হতো। মুসলিম সুফিরা দীর্ঘ রাতের প্রার্থনার জন্য কফি পান করতেন, যাতে তাদের মস্তিষ্ক সজাগ থাকে। ইউরোপে কফি পৌঁছাতে সময় লাগলেও, সেখানে পৌঁছানোর পর এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৭ শতকের শেষভাগে ভেনিস ও লন্ডনে প্রথম কফি হাউজগুলো খোলা হয় এবং সেগুলো ধীরে ধীরে বুদ্ধিজীবীদের মিলনস্থলে পরিণত হয়।

আজকের আধুনিক যুগে কফি একটি বৈশ্বিক পানীয় হিসেবে পরিচিত, যাকে শুধু এক কাপ পানীয় নয়, বরং এক গভীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কালদির কৌতূহল ও দুঃসাহসিকতা থেকে শুরু করে এটি এখন মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গী।

Share on Google Plus

About রিসার্চ অ্যানালিটিকা

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 Comments :

Post a Comment